নরসিংদীর সদর উপজেলার চরাঞ্চলের আলোকবালী ইউনিয়নে আধ্যিপত্য বিস্তার, বালু উত্তোলন ও দখলদারিত্ব নিয়ে ফের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে ছোড়া গুলিতে আলোকবালী ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেক মিয়া (৪৫) নিহত হয়েছেন।
আজ সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ভোর ৪টার দিকে ইউনিয়নের মুরাদনগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের ঘটনায় আরো তিনজন আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন নরসিংদী সদর মডেল থানার ওসি মো. এমদাদুল হক।
নিহত সাদেক মিয়া মুরাদনগর গ্রামের রূপ মিয়ার ছেলে। গত ১২ দিনের ব্যবধানে এ নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মহিলাসহ তিনজন নিহত হলেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বেশ কিছুদিন ধরে মেঘনা থেকে বালু উত্তোলন ও এলাকার আধিপত্য নিয়ে আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক শাহ আলম চৌধুরী ও সম্প্রতি বহিষ্কার হওয়া সদস্য সচিব আব্দুল কাইয়ুম মিয়া গ্রুপের মধ্যে কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয়। নিজেদের শক্তি বাড়াতে দুই পক্ষই কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিজেদের পক্ষে যুক্ত করেছেন।
তারই ধারাবাহিকতায় কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয়। এর আগে এই দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গত ১৮ সেপ্টেম্বর মুরাদনগর গ্রামের বিএনপি কর্মী ইদন মিয়া (৫৫) ও ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে বীরগাঁও সাতপাড়া গ্রামে ফেরদৌসী আক্তারকে (৪৫) গুলি করে হত্যা করা হয়।
ইদন মিয়া বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা কাইয়ুম মিয়ার সমর্থক ও ফেরদৌসি আক্তার বিএনপি নেতা শাহ আলম চৌধুরীর সমর্থক ছিলেন বলে স্থানীয়রা নিশ্চিত করেন। ওই ঘটনার পর থেকে কাইয়ুম মিয়া তার নিয়ন্ত্রণাধীন মুরাদনগর, বকশালীপুর, বাখরনগর ও বীরগাঁও গ্রামের প্রভাব হারান।
এই প্রেক্ষাপটে আজ সোমবার ভোরে পুনরায় চার গ্রামের দখল পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করলে প্রতিপক্ষ বাঁধা দেয়। এক পর্যায়ে সংঘর্ষে সাদেক মিয়া নিহত হন। নিহত সাদেক বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা আব্দুল কাইয়ুমের সমর্থক।
এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর সংঘর্ষের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে যমুনা টিভির সাংবাদিক হামলার শিকার হন। সংঘর্ষ ও সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় তিনটি পৃথক মামলা দায়ের হয়েছে।
ইতিমধ্যে আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উভয় গ্রুপের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও জড়িত রয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মীদের যৌথ অংশগ্রহণের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই এ এলাকায় দ্বন্দ্ব চলে আসছে।
শাহ আলম চৌধুরী বলেন, ‘বালুখেকো, খুনি ও অপকর্মের দায়ে বহিষ্কৃত আব্দুল কাইয়ুম ও তার বাহিনী নিরীহ সমর্থকদের উপর হামলা চালাচ্ছে। সে আওয়ামী লীগের দোসর ও তাদের সুবিধাভোগী। আমার দলে কোনো আওয়ামী লীগ কর্মী নেই। বরং কাইয়ুম আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে মিলে একের পর এক খুন ও সন্ত্রাস চালাচ্ছে। বিষয়টি আমি কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়েছি।’
অভিযোগ অস্বীকার করে আব্দুল কাইয়ুম মিয়া বলেন, ‘ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আসাদ উল্লাহ ও সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দিপুসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর হামলা করেছে। এখন পর্যন্ত আমার দুইজন কর্মী নিহত হয়েছেন। আসাদ উল্লাহ ও দেলোয়ার দিপুকে গ্রেপ্তার করলে এলাকায় শান্তি ফিরে আসবে।’
সদর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ এমদাদুল হক বলেন, ‘আলোকবালীতে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একজন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছে। আমি ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। কোন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে। নিহতের লাশ ময়না তদন্তের জন্যে নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ফরিদা গুলশানারা কবির বলেন, ‘আমাদের এখানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নিহত একজনকে নিয়ে আসা হয়েছে। আহত অবস্থায় আরো কয়েকজন নিয়ে আসা হয়েছে। তারা ভর্তি আছেন।’